ধুকে ধুকে টিকে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কাঁসাশিল্প

মোঃ সাজেদুল হক সাজু চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কাঁসা-পিতল শিল্পের একসময় সুদিন থাকলেও এখন অনেকটায় যেন ধুকে ধুকে টিকে আছে। বাপ-দাদার রেখে যাওয়া এ শিল্প বর্তমান প্রজন্মেও কয়েকজন ধরে রাখলেও, অনেকেই ছেড়ে গেছেন পারিবারিক এ ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সহযোগিতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পে আবার খুলবে সম্ভাবনার দ্বার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আজাইপুর, আরামবাগ, শংকরবাটি ও রামকৃষ্টপুর এলাকার প্রতিটি ঘরেই হত কাঁসা পিতলের কাজ। গ্রামের মানুষের এক সময় ঘুম ভাঙত হাতুড়ির টুং টাং শব্দে। ভোর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলতো এই কর্মযোগ্য। তৈরী হত, তালা বাসন, কলসি, গ্লাস, জগ, চামুচ, বাউলি, বালতিসহ নানা ধরনের ব্যবহায্য পন্য। সময়ের ¯্রােতে অনেকটায় যেন হারাতে বসেছে সেই সোনালী অতীত। এখন একশোর মত কারাখানা টিকে আছে এ অঞ্চলে।
থালা বাটির কারিগর মোহাম্মদ মুসলিম জানান, মেলামাইন বাজারে আসার পর আর আগের মত কাজ হয় না। বিহ্যাস্যাধিতে দানদক্ষিনার জন্য যেটুকু কাসার তালি-বাটি লাগে তাই কিনে এখন মানুষ। বাপ-দাদার পেশা হওয়ার কারণে তিনি এখনও ধরে রেখেছেন। নতুনরা কেউই এই পেশায় আসতে আগ্রহী নয়।
গ্লাসের কারিগর মেরাজ হোসেন জানান, কি করব এই কাজটায় শিখেছি তাই এটায় করে কোন রকমে পরিবার চালাচ্ছি, তবে দিনে দিনে কাজ এতো কমে গেছে যে, আমাদেরই অনেকেই এখন বাধ্য হয়েই অন্য পেশায় চলে গেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজারেই মূলত বিক্রি হয় কাঁসা পিতলের সমগ্রী। সেখানকার মধুমিতা বাসুনালয়ের মালিক মো. আব্দুল গফুর জানান, তামা ও সস্তার মিশ্রনে পিতল তৈরী হলেও এখন তামা ও দস্তা সহজে পাওয়া যায় না। পুরাতন জাহাজ থেকেও মিলত কাঁচামাল, কিন্ত এখন কাঁচামালই ঠিকমত পাওয়া যায় না। অধিকাংশ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে পুরাতন কাঁসা-পিতল সরাসরি ঢাকায় যাচ্ছে, আবার সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে চলে যাচ্ছে। ফলে আমাদের মত মহাজনা কাঁচামাল সংকটে পড়ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ জানান, একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ কাঁসা শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলো। এখানকার তৈরী কাঁসা পিতলের পন্যের সুনাম ছিলো সারাদেশ জুড়েই। এখনোও সুমান আছে, তবে অর্থ- কাঁচামাল ও দক্ষ কারিগরের সংকটে কারখানা গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগের সেই সুদিন আর নেয়। তবে আমরা চেম্বারের পক্ষ থেকে ভারতে একটি মেলার করেছি, সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কাঁসার পন্য প্রদর্শন করেছেন উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, কাঁসাশিল্পের ঐতিহ্য ফেরাতে যেন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়।