পূর্ণভবা নদীতে পানি বৃদ্ধি, ভেসে গেছে কেটে রাখা মাঠের ধান
পূর্ণভবা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গোমস্তাপুর উপজেলার বিল কুজাইন এলাকার প্রায় আড়াই হাজার বিঘা পাকা ধান তলিয়ে গেছে। কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে না পেরে দিশেহারা কৃষকরা।
চাঁপাইবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন রাধানগরে বিল কুজাইন। এ বিলটিতে বছরে একবার ধান হয়, আর অর্ধেক সময় হয় মাছ চাষ। সীমান্তবর্তী এ বিলটিতে স্থানীয় কৃষকরা ধান চাষ করে আসলেও, কয়েক বছর থেকে ধান ঘরে তোলার আগে উজানের পানিতে ফসল হানির ঘটনা ঘটছে। গত বছরও উজানের পানিতে ডুবে গিয়েছিলো কৃষকের ধান, সেই সময় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের এবার প্রনোদনার বীজ ও সার দেয়া হয়েছিলো, প্রনোদনার সেই ধানবীজ লাগিয়েছিলেন অনেক কৃষক, সেই ধানও ঘরে তোলার আগে ডুবে গেল।
বিল কুজাইনে প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা শেষ হয়েছিলো, কোন কোন কৃষক কাটা ধান জমিতেই বিছিয়ে রেখেছিলেন আটি করে, কেউ কেউ আবার একসাথে জড়ো করে রেখেছিলেন। পানির তোড়ে কেটে রাখা এসব ধান ভেসে গেছে। আর যে সব ধান কাটা হয়নি সেগুলো ডুবে আছে। বিলে পানি চলে আসায়, ট্রলি বা ছোট ট্রাক্টরে করে নৌকা নিয়ে এসে, সেই নৌকাতে করে বিলে ভেসে যাওয়া ধান তুলে আনছেন কৃষকরা।
আব্দুস সালাম নামে একজন বলেন, গতবছরও পানি এ্যাসাছিলো,সেবার পানি কম থাকায় ধানের ক্ষতি একটু কম হয়্যাছিলো, তাও ধান কাটা গেছে, এবার ধান একবারই ডুব্যা গেছে। কিচ্ছু পাব না।
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, অর্ধেকের বেশি জমির ধান কাটা শেষ হয়েই গেছিলো, অন্য জমি গুলোর ধান কাটা চলছিলো, হঠাৎ করেই শনিবারের দিন রাত থেকে পূনভবা নদীতে পানি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পানি পূণভবার শাখা নদী জামদাড়া নালায় আসে। জামদাড়া উড়ম্যা (উপচিয়ে) পানি বিলকুজাইনে ঢুকে পড়ে।
পানি আসায়, কেটে রাখা ধানগুলো ভেসে গেছে, কার ধান কার কাছে গেছে, এটা এখন বুঝার কোন সুযোগ নাই, আর জমিতে যে গুলো ছিলো সেগুলো ডুবে আছে।
মতিউর রহমান বলেন, তারই ২২ বিঘা জমির ধান ভেসে গেছে। ধান কেটে জমিতেই জড়ো করে মাড়াই করার জন্য রাখাছিলো তার ধান গুলো।
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, রোকনপুর, ইসলামগঞ্জ, চেরাডাঙ্গার লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ওই এলাকার মানুষই বিল কুজাইনে ধান আবাদ করে। প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কৃষক হবে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
গোমস্তাপুর কৃষি কর্মকর্তা তানভীল আহমেদ সরকার জানান, বিলকুজাইনে প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে। এতে প্রায় দেড় হাজারের মত কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন গত কয়েকবছর থেকেই এ সমস্যাটা হচ্ছে। ধান ঘরে তোলার ঠিক আগে আগে এমন ঘটনা ঘটছে। গতবছরও ধান ডুবে যাওয়ার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন, সেই সময় ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় দেড় হাজার কৃষককে এবার উচচ ফলশীল জাতের ধানবীজ ও সার প্রনোদনার মাধ্যমে দেয়া হয়েছিলো, তারা সেগুলো লাগিয়েছিলেন। ধানও ভাল হয়েছিলো কিন্ত ঘরে তোলার আগেই বিপর্যয় ঘটে গেল।
ওই এলাকায় এ সমস্যা থেকে কৃষকদের বাঁচাতে করনীয় কি জানতে চাইলে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আসলে বিল কুজাইনে ধানটা ভালই হয়, বছরে একটা ফসলই হয়, ধান ছাড়া অন্য ফসল করার সুযোগ ওখানে খুব বেশি নাই। এরপর মাছ চাষ হয়। এখন মাছ চাষ করবেন অনেকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, এবার অনেকেই ধান কেটে রেখেছিলেন তাদের ধান ভেসে গেছে, তারা ধানগুলো নিয়ে আনছেন, আর ডুবে থাকা ধানগুলো পানি কমে গেলে হয়ত মাথা থেকে কেটে নিবেন,তবে কতটা রিকোভারি করা সম্ভব এটা এখনো বলা যাচ্ছে না।
এবারও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা তৈরী করার কথা জানান এ কৃষি কর্মকর্তা। বলেন আগামীতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রনোদনার বীজ ও সার দেওয়ার চেষ্টা করবেন।